যুগে-যুগে-গাউছুল-আজম-আগমণের-দলীল

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

(আল্লাহর নামে আরম্ভ, যিনি অত্যন্ত দয়ালু ও পরম করুণাময়।)

যুগে যুগে “গাউছুল আজম” আগমণের দলীল

(ফতোয়াটি যন্তসহকারে নিজে পড়ুন , অন্যকে পড়তে দিন)

নাহমাদুহু ওয়ানুছাল্লী ওয়া নুছাল্লিমু আলা হাবীবীহিল করিম ওয়া আলিহি ওয়া আছহাবীহি ওয়া আউলিয়ায়ে উম্মাতিহী আজমায়ীন। আম্মাবাদ-

আল্লাহ জাল্লাশানুহু এ বিশ্ব ভূমন্ডলের প্রতিপালক। তিনি মানব-দানবকে একমাত্র তারই ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। এদেরকে হেদায়তের নিমিত্তে সর্বযুগে-সর্বকালে নবী-রাসুলগন প্রেরণ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী আমাদেরকেই প্রদান করা হয়েছে। তিনি যেমন নবী-রাসুলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তাঁর উম্মতও সমস্ত নবী-রাসুলের উম্মত হতে শ্রেষ্ঠ। তাই এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্বেরবৈশিষ্ট্য হল-এবিশ্বের আভ্যন্তরীন ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার বিভিন্ন দায়িত্ব -আল্লাহ তায়ালা প্রদান করে থাকেন বিভিন্ন পদের অলীগনকে। যথা- কুতুব, আবদাল, আউতাদ, নোজবা, নোকাবা ও অন্যান্য পদের অলিগণকে, যারা আভ্যন্তরীণভাবে এ বিশ্ব জগত পরিচালনা করে থাকেন।

এদের একটি কেবিনেট বা সংসদ ছিল, আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। এর প্রধান যিনি হন তাকে কুতুব, কুতুবুল আকতাব, গাউস ও ‘গাউছুল আজম’ বলা হয়।

কিন্তু বর্তমানে তরিক্বতের পরিভাষা সম্পর্কে অজ্ঞ কিছু আলেম সভা-সেমিনারে বলে বেড়াতে দেখা যায় যে, গাউছুল আজম জিলানী (রা:) হতে ইমাম মাহদী (আঃ) পর্যন্ত গাউছুল আজম শুধু একজনই থাকবেন।

আবার একই মঞ্চে কিছু আলেম বলতে অপচেষ্টা চালায় গাউছুল আজম শুধু মাত্র দু’জন। একজন হয়রত গাউছুল আজম জিলানী (রা:) অপরজন হচ্ছেন হয়রত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (রহ:)। এ দুইজনের অধিক হওয়া অসম্ভব । এহেন ভ্রান্ত আক্বিদা বিলুপ্ত করার মানসে সঠিক ফতোয়া ধর্ম পরায়ন মুসলমান অলি প্রেমিক সুন্নি জনতার সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে মুনিরীয়া তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ ওলামা পরিষদ কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের একমাত্র মূখপত্র “ত্রৈমাসিক ফজলে আহমদী” ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪তম সংখ্যায় বিস্তারিত বর্ণনা সহ “যুগে যুগে গাউছুল আজমের ধারাবাহিকতায় কাগতিয়ার মহান মোর্শেদ গাউছুল আজম (ম:জি:আ:)” নামক পুস্তক প্রণয়ন করেন।

চট্টগ্রাম লালদিঘী ময়দানে ‘এশায়াত সম্মেলন’ ০৭, মুসলিম হলে ‘এশায়াত সেমিনার’ ০৭, জমিয়তুল ফালাহ জাতীয়মসজিদ ময়দানে ‘তরিক্বত কনফারেন্স’ ০৭, লালদিঘী ময়দানে ‘এশায়াত সম্মেলন’ ০৮, জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে ‘গাউছুল আজম কনফারেন্স’ ০৮ সহ প্রায় সময় যুগে যুগে গাউছুল আজম এর আগমন প্রসঙ্গে কোরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস এর আলোকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচার-প্রসার করা হয়েছে । এমনকি ০৫/০৪/২০০৮ইংও ০৪/০৬/২০০৮ইং ‘সাংবাদিক সম্মেলন’ করে বিভিন্ন মিডিয়া ও জাতীয় সংবাদ পত্রের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে বহুল প্রচার ও প্রসার করা হয়। এবং ০৫/০৩/২০০৮ ও০৬/০৬/২০০৮ইং জাতীয় পত্রিকায় ‘ক্রোড়পত্র’ এর মাধ্যমে সারা বিশ্বে প্রচার করা হয়।

এতদসত্ত্বেও কিছু আলেম নিজে কোন দলিল উপস্থাপন ও আমাদের দলিল খন্ডন ব্যতিরেকে নির্লজ্জভাবে তাদেরকে পুরানো বাতিল আক্বিদার প্রচারে ব্যস্ত দেখে একেবারে এদের বাতুলতাকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে এ সংক্ষিপ্ত ফতোয়া প্রকাশ করা হল।

কুতুব, কুতুবুল আকতাব, গাউছ ও গাউছুল আজম এর বর্ণনাঃ এ পৃথিবীকে আভ্যন্তরীনভাবে পরিচালনা করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা বেলায়তের একটি কেবিনেট রেখেছেন, যার প্রধানকে ‘কুতুব’ বলা হয়। #যেমনঃ-

(১) বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস, মুজাদ্দিদ ও ফকিহ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রঃ) মিরকাত ১০ম খন্ডে (বেলায়তের কেবিনেট প্রধানের লকব সম্পর্কে) বলেন, সুফিয়ায়ে কেরামের ব্যবহৃত প্রথম শব্দ হল কুতুব, তাকে গাউছও বলা হয়। আর উনি প্রতি যুুুগে একজন থাকেন।

(২) এজাবাতুল গাউছ নামক কিতাবের ২৬৫পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, আউলিয়ায়ে কেরাম এর প্রধান যিনি হন তিনি হলেন কুতুব, যাকে গাউছ বলাহয়। ঐ কিতাবের ২৭৪পৃষ্ঠায় আছে যে, প্রতি যুগে কুলমাখলুকাতে অধিকতরকামেল হলেন কুতুব।

(৩) আল্লামা ইউসুফ নিবহানী (রঃ) জামেউ কারামাতিল আউলিয়া কিতাবের৬৯ পৃষ্ঠায় বলেন কতগুলো ‘কুতুব’ আছেন যারা কোন এলাকা বা শহর বা অঞ্চল প্রধান হন (যেমন কুতুবুল হিন্দ, কুতুবুল ইরাক, ইত্যাদি)। আর কতগুলি ‘কুতুব’ আছেন যারা কোন দল বা সম্প্রদায় এর প্রধান হন (যেমন কুতুবুল আওতাদ, কুতুবুল আফরাদ, কুতুবুন নুজাবা, কুতুবুন নুকাবা) অনুরূপভাবে আল্লামা ইবনুল আরবী (রহঃ) ফুতুহাতে মক্কীয়া এর মধ্যে বলেছেন ‘‘জেনে রাখ যে, প্রত্যেক শহরে বা গ্রামে বা মহাদেশে একজন কুতুব থাকেন’’।

(৪) মোল্লা আলী ক্বারী (রঃ) মেরকাত ১০ম খন্ড-১৭৯পৃষ্ঠায় বলেছেন আওতাদ গণ পৃথিবীর চার প্রান্তের কুতুব তারা (তাদের প্রধান) কুতুবুল আকতাব থেকে ফয়েজ গ্রহণ করেন, যাকে গাউছুল আজম করে নাম রাখা হয়। এখানে তিনটি লকব প্রকাশ পায়।(ক) চার আওতাদ পৃথিবীর চার প্রান্তের চার কুতুব অর্থাৎ কুতুবুল মাশরিক, কুতুবুল মাগরিব, কুতুবুল জুনুব, কুতুবুশ শেমাল।(খ) এই কুতুব গনের প্রধানকে ‘কুতুবুল আকতাব’ বলা হয়।(গ) ‘কুতুবুল আকতাব’ এর অন্য লকব ‘গাউছুল আজম’।

(৫) ইমামে রব্বানী হযরত মোজাদ্দেদে আলফেছানী (রঃ) তাঁর ২৫৬ নং মকতুব এ লিখেছেন, ‘কুতুবকে তার অন্যান্য সহকর্মী ও সহযোগী কুতুব থাকার কারণে কুতুবুল আকতাব বলা হয়। ( উল্লেখ্য যে, মোল্লা আলী ক্বারী (রঃ) এর মতে কুতুবুল আকতাবকে গাউছুল আজম বলা হয়।) যুগে যুগে গাউছুল আজমঃ

যুগে যুগে গাউছুল আজমঃ

(১)তরিক্বতের পরিভাষায় “কুতুব” লকবটি এজাফত (সম্বন্ধ) ব্যতীত অলিদের মধ্যে সাধারণভাবে এমন একজন অলির বেলায় ব্যবহৃত হয়, যিনি তার যুগের অলিদের মধ্যে শুধু একজনই হন। (জামেউ কারামাতিল আউলিয়া-৬৯ পৃষ্ঠা)

(২) মোল্লা আলি ক্বারী (রহ:) এর বক্তব্য হল কুতুব যিনি গাউস হন, তিনি প্রতিযুগে একজন থাকেন। তাকে কুতুবুল আকতাব ও গাউছুল আজম বলা হয়। মেরকাত ১০ম খন্ড ১৭৮ পৃষ্ঠা।

(৩) “এজাবাতুল গাউস” কিতাবের সার কথা হল-রাহমাতুল্লিল আলামীন (দঃ) ‘কুতুবিয়তে কুবরা’র পদে আসীন থাকার পর হযরত ছিদ্দীকে আকবর, ফারুকে আজম, ওসমান, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুম হতে তার পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে ইমাম মাহুদী (আঃ) পর্যন্ত ‘কুতুবুল আকতাব’ এর পদে আসীন হবেন (গাউছুল আজম থাকবেন)।

(৪) মিরকাত ১১ খন্ড-৪৬০ পৃষ্ঠায় বলেন যখন গাউছুল আজম ইন্তেকাল করেন সাধারণত এ চারজন ‘আওতাদ’ হতে একজনকে ঐ আসনে সমাসীন করা হয়।

(৫) মিরআত ৭ম খন্ড-২৬৯ পৃষ্ঠায় মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রহঃ) বলেন। অতঃপর পৃথিবীতে সর্বদা একজন কুতুব/ গাউস/ কুতুবুল আকতাব/ গাউছুল আজম থাকবেন । (অনুরূপ তাফসীরে নঈমী ১১ পারা-৩৯৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল বয়ান ৬ষ্ঠ খন্ড-৩৬৪ পৃষ্ঠা, মিরআতুল আছরার-৯১ পৃষ্ঠা, রুহুল বয়ান ১ম খন্ড-৯৩ পৃষ্ঠা)

(৬) কুতুব/ গাউস/ ‘গাউছুল আজম’ একযুগে একজন থাকেন তিনি ইন্তেকালকরলে তার পরিবর্তে অন্য একজনকে করা হয়। (জুরকানী ৫ম খন্ড ৩৯৬ পৃষ্ঠা)

(৭) আল হাবীলিল ফতাওয়া ২য় খন্ড-৪৩৩ পৃষ্ঠায় ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়্যুতি (রহঃ) লিখেন, কুতুব/ গাউস/ গাউসুল আজম’ ইন্তেকাল করলে তার স্থলাভিষিক্ত চার ‘আখইয়ার’ হতে একজনকে করা হয়।কুতুব এর সমার্থক লকব সমূহঃকুতুবে জমান, কুতুবে আলম, কুতুবুল আকতাব, কুতুবে দাওরান, কুতুবুল আউলিয়া, কুতুবুল ইরশাদ, কুতুবে মাদার, কুতুবে রব্বানী, কুতুবুল ফরিকাইন।

গাউছ এর সমার্থক লকব সমূহঃ গাউছে জামান, গাউছুল আজম, গাউছে দাওরান, গাউছুল আমিন, গাউছে মোকাররম, গাউছুল আলম, গাউছুল কামেলীন, গাউছুছ ছাকলাইন ও গাউছে ছমদানী ইত্যাদি।

উপরোল্লেখিত আলোচনা হতে বুঝা গেল কুতুব, কুতুবুল আকতাব গাউছ ও গাউছুল আজম একই অলীর লকব। এ লকব ও তদ অর্থবোধক লকব, গাউছুল আজম জিলানী (রাঃ) থেকে শত শত অলীর বেলায় ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। যা বিভিন্ন কিতাব, মাজার সাইনবোর্ড, ব্যানার পোষ্টার ইত্যাদিতে প্রচলিত আছে।

গাউছুল আজম এর আগমনে এ যুগের আলেমদের ফতোয়াঃ

১। আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমী (ম:জি:আ:)’র সংগঠন আঞ্জুমানে মুহিব্বানে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম গাউছিয়া জিলানী কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত রায়হান সাময়িকীতে লিখা হয়, আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ আউলিয়ায়ে কেরামের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একটি পদের নাম কুতুব, সেই কুতুবিয়তের পদমর্যাদায় বেশ ক’জন আউলিয়ায়ে কেরাম অধিষ্টিত থাকেন। তাদের মধ্যে যিনি প্রধান হন তাকেই কুতুবুল আকতাব বা গাউসুল আজম বলা হয়। ঐ মহান বুযুর্গ (গাউসে আযম বা কুতুবুল আকতাব) বিদ্যমান না থাকলে এ জগত ধবংস হয়ে যাবে । গাউছিয়ত ও কুতুবিয়ত সমপর্যায়ের পদ।…..পূর্ববর্তী গাউস এর ওফাত প্রাপ্তির সাথে সাথে উক্ত পদে একজন গাউস তার স্থলাভিষিক্ত হযে যান।

২। ছুবুলোচ্ছালাম ৮৩ও ৮৪পৃষ্ঠা (আংশিক), (লেখক গাউছুল আজম গোলামুর রহমান বাবা ভান্ডারী (রহঃ) এর খলীফা কুতুুবে আজম, গাউছে মোকাররম আব্দুচ্ছালাম ইছাপুরী।) “প্রত্যেক শতাব্দীতে একজন গাউছুলআজম থাকিতেই হইবে। সুতরাং যাহারা হযরত শেখ সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর পর আর কোন গাউছুল আজম হইবেনা বলিয়া ধারণা করে তাহারা ভ্রান্ত। তাহারা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর হাদিসের বিরোদ্ধে ভ্রান্ত মতের পোষকতা করতঃ গাউছিয়ত বড়পীর (রাঃ) এর জাতে খতম হইয়াছে বলিয়া অনুমান করে। যেমন শিয়াগণ বলে যে, বেলায়ত হযরত আলী (কঃ) এর জাতে খতম হইয়াছে।”

৩। বেতাগী আনজুমানে রহমানিয়া কর্তৃক ২০০২ইংরেজীতে প্রকাশিত ‘আস্তানা’ নামক একটি স্মরণিকা বের করা হয়। এতে আল্লামা কাজী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী ছাহেবের অভিমত রয়েছে। উক্ত স্মরণিকার১,৭,১২ পৃষ্ঠায় হযরত আল্লামা হাকিম শাহ মোহাম্মদ বজলুর রহমান (রঃ) কে ‘গাউছুল আজম’ বলেছেন।

৪। মাওলানা ইদ্রিস রজভী সাহেব, চরণদ্বীপ, বোয়ালখালী, প্রকাশকাল এপ্রিল-২০০৮ইং গাউছুল আজম তত্ত্ব নামক লিপলেটে লিখেছেন- “উল্লেখ থাকে যে, বাতেনীভাবে জগতের শৃংখলা, শাসন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্যে নির্দিষ্ট সংখ্যা ও নির্দিষ্ট পদে অলী, গাউছ, কুতুব, আবদাল, ও গাউছুল আজম ইত্যাদি নামে সর্বক্ষণ নিয়োজিত ছিলেন এবং আছেন। তবে এদের মধ্যে মানব-দানব তথা সারা বিশ্বের জন্য গাউসুস-সাকলাইন তথা গাউসুল আজম অর্থাৎ সর্ববৃহৎ সাহায্যকারী নামে ও কাজে শুধু একজন ব্যক্তিই সার্বক্ষণিকভাবে থাকবেন। এদের মধ্যে কেউ ইন্তিকাল করলে তদস্থলে তাদের পরিষদের নিয়ম অনুসারে নিম্নস্তর বা বাহিরের কোন যোগ্য ব্যক্তিকে সেই পদে নিয়োজিত করা হয়।” মাসিক তরজুমান, জমাদিউস সানি ১৪২৯ হিজরী জুন/ জুলাই-২০০৮ইং পৃঃ ২২)

৫। যুগ ‘জিঞ্জাসা’ প্রথম খন্ড মুফতি সৈয়্যদ অছিয়র রহমান ছাহেব কর্তৃক লিখিত ১০৪পৃষ্ঠায় আছে যে, প্রত্যেক যুগে গাউসুল আজম বা অলিকুল সরদার বিরাজমান থাকেন। …. যাকে ‘গাউছে আজম বা গাউছে জামান’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। সুন্নি মুসলানদের সুদৃষ্টি কামনা করছি যে, আল্লামা অছিয়র রহমান ছাহেবের ভাষ্য মতে গাউছে জমান এবং গাউছে আজম একই পদ ও একই অলীর লকব। সূর্যের আলোর ন্যায় স্পষ্ট যে, ছিরিকোটি সিলসিলায় হযরত তৈয়্যব শাহ ছাহেব (রঃ) কে গাউছে জমান বলাহত এবং বর্তমানেও বলা হয়। আর উনিও গাউছে জমান, গাউছুল আজম লকবকে এক বলে স্বীকার করেছেন।

৬। আঞ্জুমান এ রহমানিয়া আহমদীয়া সুন্নিয়া কর্তৃক প্রকাশিত মাসিক তরজুমান ১৯৯৩ইং ত্রয়োদশ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা জুন/ জুলাই, মাহে মহরম ১৪১৪ হিজরী, প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন মাওলানা অছিউর রহমান ছাহেব। “পৃথিবীতে যত আউলিয়ায়ে কেরাম বাহ্যিক হায়াতে থাকেন। তাদেরমধ্যে সর্বদা একজন ‘গাউছুল আজম’ বিরাজমান থাকেন।”

৭। মাসিক তরজুমান মাহে জমাদিউল আওয়াল ১৪১৬ হিজরী অক্টোবর ’৯৫ইং যেসব অলী বুযর্গ স্বীয় মহাত্ব্য ও কর্মময় ভূমিকার ব্যাপকতার কারণেযে স্থানে পৌঁছেছেন তাদের শানে সুলতানুল আউলিয়া বা যুগের অলীকুল সুলতান বলতে অসুবিধা নেই। যেমন হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ।

৮। মাসিক তরজুমান পঞ্চম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ ইং ৬ষ্ঠদশ বর্ষ, মাহে জমাদিউল আউয়াল ১৪১৮ হিজরী, সুতরাং সে সময়ে হযরত চৌরভী (রহঃ)‘গাউছুল আজম’ ছিলেন এবং এর পর হযরত ছিরিকোটি (রহঃ) উক্ত দায়িত্বেআসবেন।

৯। খাজা আব্দুর রহমান চৌরভী (রহঃ) লিখিত মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসুল প্রকাশকাল মে-২০০৩ইং ভূমিকায় উলে¬খ আছে যে, হযরত আব্দুর রহমান চৌরভী (রহঃ) কে প্রশ্ন করা হয় যে, এখনকার কুতুবে আলম তথা গাউছে আজম কে? তিনি উত্তরে বলেন “হুজুর গাউসে বোগদাদ (রাঃ)র পরেএ উঁচু মকামে দুনিয়ার কেউ অধিষ্ঠিত হননি। উক্ত স্থান শুন্য থাকে। বহুদিন পর এক এতিম বালক পিতৃহীন ও শৈশবে, শাহে জীলান, অলিকুল সম্রাট হযরতুল আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ)র প্রকৃত স্থলাভিষিক্ত হন। আর এখনও পর্যন্ত তিনি দায়িত্ববান ও ক্ষমতাসীন ‘গাউসে আজম’ হিসাবে বিরাজমান।” ( উল্লেখ্য যে, হযরত আব্দুর রহমান চৌরভী (রহঃ) নিজেকেই গাউছুল আজম বলেছেন।)

১০। মাসিক তরজুমান বারতম সংখ্যা, মাহে জিলহজ্ব ১৪০৯ হিজরী দ্বাদশ বর্ষ, এ মহান ব্যক্তিই (হযরত চৌরভী) হলেন এ যুগের গাউছে আজম।

১১। মাসিক তরজুমান জমাদিউল আউয়াল ১৪১৫ হিজরী জুন/জুলাই ২০০৪ ইং, প্রত্যেক যুগে আউলিয়ায়ে কেরামের মধ্যে যিনি শীর্ষ পদ বা সর্দার হয়ে থাকবেন। তাকে ‘কুতুবুল আকতাব বা গাউছুল আজম’ নামে আখ্যায়িত করা হয়।

১২। মাসিক তরজুমান মাহে শাবান, ১৪২১ হিজরী, নভেম্বর ২০০০ সাল দিল্লি খাইরিয়া দরবার শরীফের আরো একটি আধ্যাত্মিক চর্চার কেন্দ্র হলো বাংলাদেশের খূলনাস্থ আজিজিয়া দরবার শরীফ, এটার প্রতিষ্ঠাতা হলেন হযরত গাউছুল আজম মৌলানা শেখ আব্দুল আজিজ নক্শবন্দী (রহঃ)।

১৩। মাসিক তরজুমান রমজান ১৪২৮ হিজরী সেপ্টেম্বর/ অক্টোবর ২০০৭ সাল মৌলানা কাজী মঈনউদ্দীন আশরাফী ছাহেব লিখেন, সবসময় একজন মাত্র গাউছ, গাউছিয়্যতের দায়িত্বে রত থাকেন। অতঃপর শাইখ-এ আকবর (রহঃ) বলেন প্রত্যেক যুগে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর পদাঙ্কনুসারী এক ব্যক্তি থাকেন। তিনি যুগের আব্দুল্লাহ (আল্লাহর নৈকট্য ধন্য বান্দা) তাকে কুতুবুল আকতাব ও গাউস বলা হয়। ফুছুলুল হেকম (উর্দু) ২৩২পৃষ্ঠা।

ইতোপূর্বে সুন্নি ওলামায়ে কেরাম কর্তৃক বিভিন্ন পুস্তক বা প্রকাশনায় সরাসরি যাদেরকে গাউসুল আজম ও তৎ অর্থবোধক লকব বলা হয়েছেঃ

১। গাউছুল আজম বকতানুছ, বাদশাহ পরীস্তান, দিওয়ানে আজীজ ১৫০পৃষ্ঠা লেখকঃ আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ)

২। গাউছুল আজম আহমদুল্লাহ মাইজভান্ডারী (র:), দিওয়ানে আজীজ ৩৯পৃষ্ঠা লেখকঃ আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ)

৩। গাউছুল আজম গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী (র:), দিওয়ানে আজীজ ৪০পৃষ্ঠা: লেখকঃ আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ)

৪। গাউছুল কামেলীন গাউছুল আজম সৈয়দ আব্দুল হামিদ বাগদাদী (র:), দিওয়ানে আজীজ ৩১পৃ: লেখকঃ আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ)

৫। গাউছুল আজম আজিজুল হক শেরেবাংলা (রা:), দিওয়ানে আজীজ ১৯৪পৃষ্ঠা: মাওলানা আব্দুল মাবুদ রচিত তাহনিয়তনামা।

৬। গাউছুল ওয়ারা আজিজুল হক শেরেবাংলা (রাঃ), দিওয়ানে আজীজ ১৭৪পৃষ্ঠা: শায়ের নাইয়ার কর্তৃক রচিত তাহনিয়তনামা।

৭। কুতুবে আলম, গাউছুল আজম শেরেবাংলা (রা:), তোহফায়ে আজিজিয়া-ভূমিকা, মাওলানা শেখ জামাল উদ্দীন সাহেব

৮। গাউছুল আজম খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রা:), ছোবুলুছ ছালাম ৫৭পৃষ্ঠা:

৯। গাউছুল ওয়ারা খাজা আবু ছালেহ নজর (রহ:), শজরায়ে ছিরকোটি।।

১০। কুতবে আলম গাউছে দাওরান আব্দুর রহমান চৌহরভী (রহ:), শজরায়ে ছিরকোটি।

১১। গাউছে জমান মৌলানা হোছাইন (রহ:), দিওয়ানে অজীজ ৭৯পৃষ্ঠা লেখকঃ আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ)

১২। গাউছুল আজম হযরত মুহিউদ্দীন কাট্টলী, দিওয়ানে আজীজ ৫৭পৃষ্ঠা: লেখকঃ আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ)

১৩। আল্লামা গাজীশেরে বাংলা (রহ:) নিজেও গাউছুল আজম হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর দরববারে দোয়া করেন, দিওয়ানে আজীজ ৪০পৃঃ

১৪। গাউছুল কামেলীন, গিয়াছুত তালেবীন,সুলতানুল আরেফীন, হাজী এমদাদুল্লাহ মহাজেরে মক্কী (রহঃ) দিওয়ানে আজীজ ২৯পৃঃ

১৫। গাউছে মোখতার আল্লামা আব্দুল মালেক মুহিউদ্দিন আল কুতুবী (রহঃ), ওরশ শরীফ স্মরণীকা -২০০২, ২০০৫।

১৬। গাউছে মোকাররম আল্লামা আব্দুচ্ছালাম ইছাপুরী (রহঃ), ছুবুলোচ্ছালাম।

১৭। গাউছে আমিন আল্লামা আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (রহঃ), শজরা, ছিলছিলায়ে ফরহাদাবাদীয়া।

১৮। গাউছে আলম আল্লামা হযরত আশরাফ জাহাঙ্গীর (রহঃ), ত্রৈমাসিক গাউছুল আলম, এপ্রিল-জুন,২০০১ইং।

১৯। গাউছুল আজম আমিরুজ্জমান (রহঃ), পটিয়া, ওরশ স্মরণীকা -২০০৭ইং।

২০। বেলায়ত সম্রাট, অলিকুল শিরমণি, সৈয়দ আহমদ ছিরকোটি (রহঃ), মাসিক তরজুমান, জ্বিলকদ-১৪০৮ হিজরী।

২১। গাউছুল আজম হাবীবুর রহমান, দৈনিক পূর্বকোণ-২১/০৩/০৭ইং, আজাদী-২২/০৩/০৭ইং।

২২। গাউছুল আজম আব্দুল কুদ্দুস, হাওলা, বোয়ালখালী, পূর্বকোণ-১১/০৪/০৭ইং।

২৩। গাউছুল আজম মাসুদুল করিম, মহেশখালী, সুন্নি জগৎ , নভেম্বর-০৬ইং।

২৪। গাউছুল আজম নজির আহমদ শাহ, আগ্রাবাদ, বুরহানুল আশেকীন।

২৫। গাউছুল আজম নেছারুল্লাহ, সরফভাটা, রাঙ্গুনিয়া, ৪৩তম ওরশের লিফলেট ও মাজারস্থ শজরা।

২৬। গাউছুল আজম শাহ আমানত (রহঃ), তোহফায়ে আজিজিয়া। উল্লেখ্য যে, গাউছ, গাউছে জমান, গাউছুল আজম, গাউছুল ওয়ারা, গাউছে দাওরা, কুতুবুল আকতাব, কুতুবে আলম একই অলীর লকব। যা নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরাম ও মাশায়েখে এজাম এর উক্তি দ্বারা নিঃস্বন্দেহে প্রমাণিত। যেমন-

১। গাউছুল আজম হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভন্ডারী (র:) এর বিশিষ্ট খলিফা হযরত আব্দুল গণী কাঞ্চনপুরী (র:) আয়নায়ে বারীর ১৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, সুফীয়া-ই কেরাম শীর্ষস্থানীয় অলিদের মধ্যে একজন কে কুতুবুল আকতাব ও গাউছ জানেন।

২। মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) মিরকাত ১০ম খন্ড ১৭৮পৃষ্ঠায় বলেন যে,কুতুবুল আকতাব ও গাউছুল আজম একই পদের নাম ।

৩। কুতুবে আলম ও গাউছুল আজম একই অলীর লকব, মিরআত।এই ফতোয়া দ্বারা প্রমাণিত হল যে, পূর্বেকার এবং এখনকার আলেমগণ এ কথার উপর একমত যে সর্বদা গাউছিয়তের অধিকারী একজন আল্লাহর অলী স্বশরীরে জীবিত থাকেন। যাকে গাউছ, গাউছে জমান, কুতুব, কুতুবুল আকতাব, কুতুবে আলম ও গাউছুল আজম বলা হয়।

সকল ওলামায়ে কেরাম একমত হয়েছেন যে, যুগে যুগে গাউছুল আজম থাকবেন, যা শরীয়তের তৃতীয় দলিল ‘এজমা’ এর পর্যায়ে পড়ে। এমনকি বর্তমান যুগের আলেমগণও স্বীকার করেছেন, প্রত্যেক যুগে একজন গাউছুল আজম থাকবেন।

সুতরাং তাদের কথামতে বর্তমান যুগেও একজন ‘গাউছুল আজম’ আছেন।

স্বকীয় বৈশিষ্ট্য সমূহ

গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ