بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
(আল্লাহর নামে আরম্ভ, যিনি অত্যন্ত দয়ালু ও পরম করুণাময়।)
দরসুল ফিকহ, ইলমে ফিকহের গুরুত্ব
আভিধানিক অর্থে বক্তার বক্তব্যের উদ্দেশ্য অনুধাবন করাকে ফিকহ বলে।
শরীয়তের পরিভাষায় "ফিকহ" আমলের সাথে সম্পর্কিত ঐ সকল শরীয়তের বিধান জানার নাম, যা বিস্তারিত দলিল- প্রমানাদি থেকে আহরন করা হয়েছে।
হযরত শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলভি (রাহমাতুল্লাহে আলাইহি) লিখেন- ফিকহ মূলত বুঝা ও অনুধাবন করাকে বলে।
শরীয়তের পরিভাষায়: আমল সম্পর্কিত বিধান সমুহ জানাকে *ফিকহ* বলে আখ্যায়িত করা হয়।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমানঃ
فلو لا نفر من كل فرقة منهم طائفة ليتفقهوا فى الدين و لبنذروا قومهم اذا رجعوا إليهم لعلهم يحذرون-- (سورة التوبة- ١٢٢)
অনুবাদ:: এরূপ কেন হলোনা যে, তাদের প্রত্যেক বড় দল থেকে একটি ছোট দল বের হয় যাতে করে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং তারা ফিরে এসে স্বজাতিকে ভীতি প্রদর্শন করে। তাহলে হয়তো তারা বিরত থাকত। --(সূরা তাওবা-আয়াত:১২২)
সদরুল আফাযেল আল্লামা নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন- ফিকহ দ্বীনের বিধানসমূহ জানাকে বলে। পারিভাষিক "ফিকহ" উক্ত অর্থের আসল কেন্দ্রস্হল। তিনি আরো লিখেন- ফিকহ সর্বোৎকৃষ্ট ইলম।
আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) লিখেন- দ্বিনী ইলম হলো ফিকাহ ও হাদীস শরীফ। যুক্তি বিদ্যা ও দর্শনের পন্ডিতগন আলেম-ওলামা নন।এগুলো ফিকাহর সাথে সম্পর্কিত বিষয়। অতএব যার কাছে ফিকাহর জ্ঞান বেশী সেই দ্বীনের বড় আলেম। যদিও অন্যরা হাদীস ও তাফসীরের সাথে সম্পর্ক বেশী রাখে। --(ফতোয়ায়ে রেযভিয়া)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমানঃ
و من يؤت الحكمة فقد اوتى خيرآ كثيرا - (سورة البقرة- ٢٦٩)
তরজুমা:: যাকে হেকমত দান করা হয়েছে, তাকে অনেক মঙ্গল প্রদান করা হয়েছে। --(সূরা বাক্বারা-২৬৯)
"দুররে মুখতার" প্রনেতা আল্লামা হাসকফী(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) লিখেন,তাফসীরকারদের এক দল *হিকমত* এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, ঐ সকল বিষয়াদি জানা যা ইলমে ফিকহ বলা হয়ে থাকে। প্রমাণিত হলো যে, ফিকহ এমন ফযিলত বিশিষ্ট ইলম, যাকে ইহা দান করা হয়েছে তাকে প্রচুর কল্যাণ দ্বারা ধন্য করা হয়েছে। --(আদ দুররুল মুখতার)
হযরত আমীরে মোয়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত- আল্লাহর হাবীব রাসুলে আকরাম (দ.) ইরশাদ ফরমান--
من يرد الله به خيرا يفقهه فى الدين
ভাষান্তর:: আল্লাহ তায়ালা যার মঙ্গল কামনা করেন, তাকে দ্বীনের ফিকহী জ্ঞান দান করেন তথা ফকীহ বানিয়ে দেন। --(বুখারী শরীফ)
ফকীহ বানানোর অর্থ হলো- আল্লাহ তায়ালা তাকে দ্বীনের বুঝ, নৈপুন্যতা ও বুদ্ধিমত্তা দান করেন এবং তার অন্তরচক্ষু খোলে দেন যেন, কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফের অর্থ অনুধাবন করতে পারে এবং তার আসল মর্ম ও উদ্দেশ্য পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়ে যায়।
আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন - উল্লেখিত হাদীস শরীফের অর্থ এই যে, যে ব্যক্তি দ্বীনের ফকীহ হলোনা তথা যে দ্বীনের মূলনীতি ও তদসংশ্লিষ্ট বিধানসমূহ শিক্ষা করে নাই, সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। তিনি আরো লিখেন যে, আলেমগন সকল মানুষের চেয়ে এবং ইলমে ফিকহ সকল ইলম থেকে উত্তম হওয়ার বর্ণনা এই হাদীস শরীফে সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। --(ফতহুল বারী)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত- নূরুন্নবী সরকারে দু'আলম ( দ.) ইরশাদ ফরমান-
فقيه واحد اشد على الشيطان من الف عابد- (مشكوة شريف- ترمذىشريف)
বঙ্গানুবাদ:: একজন ফকীহ শয়তানের মোকাবিলায় হাজার আবেদের তুলনায় অধিক শক্ত ও ভারি। --(মেশকাত শরীফ, তিরমিযী শরীফ)
হযরত মোল্লা আলী কারী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) লিখেন-- শয়তানের কাছে একজন ফকীহ হাজার আবেদের চেয়ে ভারী এ কারনে যে, তিনি শয়তানের ধোঁকায় পতিত হয় না, এবং মানুষকে ভাল কাজের আদেশ দান করে। পক্ষান্তরে জেনারেল আবেদ শয়তানের ধোঁকায় পতিত হয় অথচ তার খবরও থাকেনা। --(মেরকাত শরহে মেশকাত শরীফ)
হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত-
اذا اراد الله بعبد خيرا فقهه فى الدين و زهده فى آلدنيآ و بصره عيوبه -- (كنز العمال)
অনুবাদ:: যখন আল্লাহ তায়ালা কোন বান্দার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে দ্বীনের ফকীহ বানান এবং তাঁর মধ্যে দুনিয়া বিমূখ হওয়ার গুন সৃষ্টি করে দেন এবং তার দোষ-ত্রুটি দৃষ্টিগোচর করিয়ে দেন (যেন তিনি নিজেকে শুধরিয়ে পবিত্র হয়ে আল্লাহর প্রিয়ভাজন হতে পারেন)। --(কানযুল উম্মাল)
হযরত আবু হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহ) হতে বর্ণিত--
ان لكل شيء دعامة و دعامة هذا الدين الفقه -- (كنز العمال)
ভাষান্তর:: প্রত্যেক বস্তুর একটি স্তম্ভ রয়েছে, আর এ দ্বীনের স্তম্ভ হচ্ছে "ফিকহ"। --(কানযুল উম্মাল)
হযরত ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত-
لا عبادة الا بفقه و مجلس فقه خير من عبادة ستين سنة -- (كنز العمال)
বঙ্গানুবাদ:: ফিকহ ব্যতীত কোন ইবাদত নেই, (কেননা ফিকহের জ্ঞান অর্জন ব্যতীত ইবাদতের আনুষঙ্গিক বিধি-বিধান জানা অসম্ভব।আর সে ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতার সাথে আল্লাহর ইবাদত দূরহ ব্যপার) এবং ফিকহের এক মাজলিস ষাট বৎসর নফল ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। --(কানযুল উম্মাল)
হযরত ওয়াছেলা রাদ্বিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত--
المتعبد بغير الفقه كاالحمار فى الطاحون- (حلية الأولياء و طبقات الاصفياء للعلامة ابى نعيم الاصفهانى)
অনুবাদ::" ফিকহ ব্যতীত ইবাদতকারী চাক্কির গাধার ন্যায়"।
উদ্দেশ্য এই যে, যেমনিভাবে অতীতে আটার চাক্কি গাধা চালাত; কিন্ত আটা খাওয়া তার ভাগ্যে জুটতনা, তেমনিভাবে ফিকহ তথা শরীয়তের মাসআলাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা ছাড়া যে ইবাদতের ক্লেশ ভোগ করে, সে কোন বিনিময় পায়না। --(হিলয়াতুল আওলিয়া ওয়া তাবক্বাতুল আসফিয়া। কৃত: আল্লামা আবু নায়ীম আল ইস্পাহানী)।
হযরত ইবনে ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহ) হতে বর্ণিত-
افضل العبادة الفقه، و أفضل الدين الورع- (المعجم الكبير للطيرانى)
তরজুমা:: সর্বোত্তম ইবাদত হলো- ফিকহ, আর দ্বীনের মধ্যে সর্বোত্তম হলো- পরহেযগারী। --(তাবরানি: আল -মু'জামুল কাবীর)